পাঠদানের সাথে যারা জড়িত তাদের হাতের কাছে বিষয়ভিত্তিক একটা কারিকুলাম না থাকলে শিখন শেখানো কার্যাবলী অনেকাংশে ব্যাহত হতে পারে। কারণ পাঠের যথাযথ শিখনফল কারিকুলামের ভেতরেই দেয়া রয়েছে। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব বাংলা বিষয়ের কারিকুলাম।
ভূমিকা
বাংলা বাঙালির মাতৃ ভাষা।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। দেশের অফিস-আদালত ব্যবসায়-বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রে বাংলা
চালু আছে। ফলে বাংলা শুদ্ধ ও সু ন্দরভাবে বলা, পড়া ও লেখা খু বই দরকার। তবে মুু খে কথা বলা আর কাগজপত্রে
লেখা দু টোই শিখতে হয়, নিয়মিত অনু শীলনের দ্বারা
রপ্ত করতে হয়। শুনে শুনে অভ্যস্ত হওয়া, পড়তে শেখা এবং লিখে লিখে অভ্যাস করা তাই একান্ত
প্রয়োজন। এই অনু শীলন ছাড়া ভাষা ঠিকমতো বলতে পারা এবং লিখতে শেখা সম্ভব হয় না। মানু ষ চিন্তা করতে শেখে ভাষার মাধ্যমে। শিশু তার
মাতৃ ভাষা অর্জন করে সহজাতভাবে। পারিবারিক
ও সামাজিক পরিমন্ডলে তা পরিপু ষ্ট
হয়। বয়োবৃ দ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা বিকশিত
ও সমৃ দ্ধ হয় নিরবচ্ছিন্নভাবে। শিশুকে
শিক্ষাদানের জন্য তাই মূ
লত মাতৃ ভাষাকেই আশ্রয় করতে হয় ।
এই শিক্ষাদানের প্রμিয়া হিসেবে
তাকে শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলা, স্বচ্ছন্দ ও সাবলীলভাবে পড়া, সু ন্দর ও পরিচ্ছন্নভাবে লেখায় সাহায্য করা
এবং তার শব্দসম্ভার সমৃ দ্ধ করা, বাক্যগঠনে তাকে দক্ষ করে তোলা এ সবই ভাষা-শিক্ষাক্রমে
বিশেষ গুরুত্ব পায়। শিক্ষাক্রমভিত্তিক ভাষা শিক্ষা তাকে ভালোভাবে আত্মপ্রকাশে সহায়তা
করে এবং তার জীবন ও পরিবেশ উপলব্ধিতে
সহায়ক হয়। আমাদের
দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলা বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয় শেখার
মাধ্যমও বাংলা। তাই বাংলা ভাষায় দক্ষতা অর্জন তার ভবিষ্যৎ জীবনে ব্যবহারিক ও কারিগরি বিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের
অনু কূ ল ভিত্তি প্রস্তুত করে দেয়। একই সঙ্গে ভাষিক দক্ষতা শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ জীবন-গঠনে
এবং স্বদেশ ও বিশ্ব, সমাজ ও সংস্কৃ তি, সাহিত্য
ও শিল্প ইত্যাদি সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। আমরা জানি, যেকোনো ভাষা শেখার ক্ষেত্রে
চারটি দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। সেগুলি হচ্ছে : শোনা, বলা, পড়া ও লেখা। আমাদের
দৈনন্দিন জীবনে ভাষিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাতৃ ভাষার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। আর গুরুত্ব
বেশি বলেই তা সু ষ্ঠু ভাবে শিখতে ও প্রয়োগ করতে না পারলে জীবনে হাজার রকমের সমস্যা
দেখা দেয়। এ কারণে প্রাথমিক স্তরে চারটি মৌলিক
ভাষিক দক্ষতার (শোনা, বলা,
পড়া ও লেখা) সমন্বিত ও সুষ্ঠু প্রয়োগের
সামর্থ্য অর্জন শিক্ষার্থীর
জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূ র্ণ।
ভাষা শেখার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তরের
শিক্ষা শেষ করার সঙ্গে ঐ চারটি দক্ষতাও অর্জন
করতে পারবে এমন প্রত্যাশাই স্বাভাবিক । অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যদি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির
পড়াশোনা শেষ করতে পারে, তাহলে ভাষাজ্ঞানের ক্ষেত্রে তার যেটু কু জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জিত হবে, তা দিয়ে সে সমাজ-পরিবেশে
বাস্তব জীবনে বাংলাভাষা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। দৈনন্দিন জীবনে চিঠিপত্র লেখা, দরখাস্ত করা, দলিল দস্তাবেজ পড়া, সরকারি বিজ্ঞপ্তি
পড়ে বু ঝতে পারা, ফরম পূ রণ করা ইত্যাদি তার পক্ষে তখন কঠিন হবে না। এছাড়া আনন্দ ও জ্ঞান লাভের জন্য প্রয়োজনীয় বই ও পত্র-পত্রিকার পঠন-পাঠনও তার পক্ষে সম্ভব হবে। এভাবে অর্জিত ভাষাজ্ঞান
তার আত্মপ্রত্যয় ও কর্মদক্ষতা অর্জনের পক্ষে সহায়ক হবে। শিশুর কল্পনা, আত্মপ্রকাশ ও
সৃ জনশীলতা বিকাশের প্রধান মাধ্যম হল তার মাতৃ ভাষা বাংলা। প্রত্যাশিত যে, পঞ্চম শ্রেণির
ভাষাদক্ষতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মধ্যে আত্মপ্রকাশেরও বিকাশ ঘটবে। শিক্ষার্থী
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশের পূর্ণ
ভূ মিকা রাখতে সক্ষম হবে।
সু যোগ পেলে প্রাথমিক স্তরে
অর্জিত তার ভাষাজ্ঞান ও দক্ষতা শিক্ষালাভের ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে
সক্ষম হবে।
(চলবে...)
No comments:
Post a Comment