মার্কিন মনোবিদ বেঞ্জামিন ব্লুম শিখনের ক্ষেত্রকে ৩ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তাঁর মতে শিখনের ৩টি ক্ষেত্রের সমন্বয়ে পুরোপুরি শিখন সংগঠিত হয়।
বেঞ্জামিন ব্লুমের শিখনের ক্ষেত্র ৩টি হলোঃ
1. Cognitive Domain.
2. Psycho-motor Domain.
3. Affective Domain.
Cognitive Domain: কোন টেক্সট (ছবি, অনুচ্ছেদ) দেখে, পড়ে বা শুনে সংশ্লিষ্ট টেক্সেটের তথ্য উপস্থাপন
করা, স্মরণ করা বা তথ্য বিশ্লেষণ করার বিষয়টি জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের অন্তর্গত। চিন্তন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট তথ্য ব্যবহার করার বিষয়সমূহ শিখনে জ্ঞানমূলকক্ষেত্রের অন্তর্গত CognitiveDomain (জানা)। এটিকে মানুষের মাথার সঙ্গে তুলনা করা যায়। কেননা চিন্তার কাজগুলো মানুষ মাথার দ্বারা করে থাকে। Psychomotor Domain:টেক্সেটে বর্ণিত তথ্য এবং তথ্য দ্বারা সংগঠিতমূল্যবোধ বা দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে অর্জিত দক্ষতার প্রয়োগ Psychomotor Domain এর অন্তর্ভূক্ত (পারা)। এটিকে মানুষের শরীরের সঙ্গে তুলনা করা যায়। কেননা চিন্তার প্রতিফলন মানুষ শারীরিকভাবে ঘটিয়ে থাকে। Affective Domain: টেক্সেটে বর্ণিত
অথবা প্রতিফলিত ভাবাবেগ, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংল্লিষ্ট মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত জীবনমান উন্নত করা Affective Domain এর অন্তর্ভূক্ত(করার মানসিকতা)। এটিকে মানুষের হৃদয় বা মনের
সঙ্গে তুলনা করা যায়। কেননা ভাবাবেগের কাজটি মানুষের হৃদয় বা মন দ্বারা সংঘটিত হয়। উল্লেখ্য, শিখনের( Learning Domain )তিনটি বিভাজনের মধ্যে Cognitive Domain এর অন্তর্গত অর্জনসমূহ (Achievement) Pape Pencil Test এর মাধ্যমে মূল্যায়ন করা সম্ভব। অন্যদিকে, Psychomotor Domain ও Affective Domain এর অন্তর্গত অর্জনসমূহ Paper Pencil Test এর মাধ্যমে Assess করা সম্ভব নয়।সংশ্লিষ্ট Domain দুইটির অন্তর্গত অর্জন Assess করার জন্য শিক্ষার্থীর আচরনিক পরিবর্তনের ধারাবাহিক দক্ষতা প্রদর্শন পরিমাপ করতে হবে, যা School Based Assessment প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভব।
Cognitive Domain এর উপস্তরসমূহ
১. Knowledge (জ্ঞানমূলক উপস্তর): ইহা Cognitive Domain এর উচ্চক্রমের প্রথম স্তর। এ স্তরে অন্তর্ভূক্ত Item এর Distracted এর কাঠিন্য মাত্রার অবস্থান সর্বনিম্নে। ইহা পঠিত, শ্রুত অথবা কোন টেক্সেটের তথ্য উপষ্থাপন বা স্মরণ করার মানসিক প্রক্রিয়া।
২. Comprehension (উপলব্ধিমূলক উপস্তর):ইহা Cognitive Domain এর উচ্চক্রমের দ্বিতীয় স্তর। ইহা বিষয়বস্তু/তথ্য উপলব্ধি করার স্তর।
৩. Application (প্রয়োগমূলক উপস্তর): ইহা Cognitive Domain এর উচ্চক্রমের তৃতীয় স্তর। ইহা উপস্থাপিত/পঠিত তথ্যের আলোকে অর্জিত জ্ঞান ও ধারণাকে নতুন পরিস্থিতিতে বা বাস্তব ক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানে প্রয়োগ ক্ষমতার স্তর।
৪. Analysis (বিশ্লেষণমূলক উপস্তর): ইহা Cognitive Domain এর উচ্চক্রমের চতুর্থ স্তর। ইহা ঘটনা/সরবরাহকৃত তথ্যের বিশ্লেষণ অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট তথ্য এবং সমস্যা তথ্যের সম্পর্ক
বিশ্লেষণ করে। ইহা ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলোকে সমগ্র তথ্য বা ঘটনার অংশ সমূহ পৃথক করে।
৫. Synthesis (সংশ্লেষণমূলক উপস্তর): ইহা Cognitive Domain এর উচ্চক্রমের পঞ্চম উপস্তর। ইহা উপস্থাপিত তথ্যের আলোকে অর্জিত জ্ঞান ও ধারণার আলোকে নতুন সমস্যার বিকল্প সমাধানে প্রস্তাব বা অর্জিত ধারণাকে নতুন পরিস্থিতিতে স্থাপন করার মানকি প্রক্রিয়ার স্তর।
৬. Evaluation (মূল্যায়নমূলক উপস্তর: ইহা Cognitive Domain এর উচ্চক্রমের ষষ্ঠ স্তর। ইহা বর্ণিত তথ্য/ঘটনার মাধ্যমে অর্জিতমূল্যবোধের মাধ্যমে ব্যক্তি, ঘটনা ইত্যাদির মূল্য আরোপ/মতামত প্রদর্শণ করার মানসিক প্রক্রিয়ার স্তর। Cognitive Domain -এর বিভিন্ন উপ- ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ক্রিয়াপদ সমূহের তালিকা: উপ-ক্ষেত্রের নাম ব্যবহার্য ক্রিয়াপদ সমূহ (Acceptable ActionVerbs)
জ্ঞান:
কে, কী, কখন, কোথায়, কোনটি, নাম কর,
তালিকা কর, মনে কর, বানান কর, উল্লেখ কর,
সংজ্ঞা দাও, শনাক্ত কর, স্মরণ কর, স্বীকৃতি দাও।
উপলব্ধি:
পার্থক্য নির্ণয় কর, ব্যাখ্যা কর, কারণ
দর্শাও, দৃষ্টান্ত দাও, প্রদর্শন কর, তুলনা কর, মতামত দাও,
উপসংহার টান, প্রমাণ কর,
পৃথক কর, অঙ্কন কর, উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর,
নিজের ভাষায় বল, অনুবাদ কর, পূনর্বিন্যাস কর,
মন্তব্য কর।
প্রয়োগ :
তৈরি কর, নির্মাণ কর, পরীক্ষা কর, চিহ্নিত কর, কাজ দেখাও, বাছাই কর, প্রয়োগ কর,
শ্রেণিবিন্যাস কর, বর্ধন কর, সম্প্রসারণ কর,
উন্নয়ন কর, সম্পর্ক নির্ণয় কর, পূনর্গঠন কর, ব্যবহার কর, সমাধান কর।
বিশ্লেষণ:
জরিপ কর, অংশগ্রহন কর, পার্থক্য নিরূপন কর,
সরল কর, ভাগ কর, সম্বন্ধ নির্ণয় কর,
অনুমান কর, শ্রেণিবিন্যাস কর, তুলনা কর,
চিহ্নিত কর, অনুমান কর, সিদ্ধান্ত কর, আন্দাজ কর।
সংশ্লেষণ:
সংকলন কর, সংশোধন কর, নকশা তৈরি কর,
রচনা কর, সমাধান কর, পরিবর্তন কর,
অনুমান কর, উদ্ভাবন কর, তৈরি কর,
আলোচনা কর, কী ঘটবে বল, সংবদ্ধ কর, নির্মাণ
কর, সর্বায়ন কর, গঠন কর, সংশ্লেষ কর,
বিস্তার কর, সার সংক্ষেপ বা সারাংশ কর,
উপসংহার টান, লিখিতভাবে প্রকাশ কর।
মূল্যায়ন:
সিদ্ধান্ত দাও, মতামত দাও, সুপারিশ কর,
স্বপক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও, পরিমাপ কর,
অগ্রগণ্যতা বিচার কর, মূল্যায়ন কর, আন্দাজ কর, বিচার কর, মানবিশিষ্ট কর।
তথ্য সূত্র:
১. সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল,বিষয়: জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন, প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর, ২০১৪।
২. বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, বাংলা, প্রকাশ কাল মে, ২০১৩। (সংগৃহীত)
No comments:
Post a Comment