Sunday, June 28, 2015

বিস্তৃত শিক্ষাক্রম-২: প্রাথমিক স্তরের পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের বৈশিষ্ট্য



প্রাথমিক স্তরের পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের বৈশিষ্ট্য

* পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে শিক্ষানীতি-২০১০ এর রূপরেখা প্রতিফলন ঘটেছে।
* জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর নির্দেশনা অনুসারে শিশুর নিরাপত্তা বিষয়টি পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে সংযোজন করা হয়েছে।
* পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো পুন:নির্ধারণ করে নতুনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে।
* প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রচলিত শিক্ষাক্রমে শিখনফল ও পরিকল্পিত কাজ ছিল না। বর্তমান শিক্ষাক্রমে শিখনফল ও শ্রেণিভিত্তিক  পরিকল্পিত কাজ সম্পূর্ণ নতুনভাবে লেখা হয়েছে।
* প্রায় সকল শিখনফলের বিপরীতে পরিকল্পিত কাজ প্রদান করা হয়েছে।
* প্রচলিত শিক্ষাক্রমে পরিকল্পিত কাজ ছিল শিক্ষকের কাজ হিসেবে, পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে তা শিক্ষার্থীর অনুশীলন-কর্ম হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
* তথ্য  প্রযুক্তির  সাথে  শিক্ষার্থীদের  পরিচয়  করিয়ে  দেওয়ার  অভিপ্রায়ে  পরিমার্জিত  শিক্ষাক্রমে  এ সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা প্রচলিত শিক্ষাক্রমে ছিল না।
* কোমল মনের অধিকারী শিশুদের দেশপ্রেম ও দেশের প্রতি ভালোবাসার উন্মেষ ঘটানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তাদের সামনে জাতীয় ইতিহাস, জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে ধারাবাহিকভাবে পরিচিত করানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।
* পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে বিভিন্ন বিষয়বস্তু যাতে সহজবোধ্য হয় এবং শিশু সেগুলো আনন্দের সাথে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, মুখস্ত করতে না  হয়  সেসকল দিকে  লক্ষ্য রেখে  শিখন-পদ্ধতি, পরিকল্পিত কাজ এবং লেখক ও অঙ্কন-শিল্পীদের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
* দীর্ঘদিন বিজ্ঞান-প্রায়শ একটি যান্ত্রিক বিষয়রূপে বিবেচিত হয়ে এসেছে। মৌখিকভাবে অনুসন্ধিৎসা, সৃজনশীলতা,  উদ্ভাবনী  দক্ষতা,  প্রশ্ন  প্রবণতার  কথা  উচ্চারিত  হলেও  প্রচলিত    শিক্ষাক্রমে  এর প্রতিফলন  ঘটেনি।  মুখস্থবিদ্যা,  প্রতিষ্ঠিত  উপাত্ত    তথ্য  অপরিবর্তী  বিষয়রূপে  শিক্ষার্থীদের  কাছে
গুরূত্ব পেয়ে এসেছে। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে এবিষয়টি একটি সজীব, গতিশীল, আনন্দদায়ক ও সৃজনশীল কর্মকান্ডরূপে  উপস্থাপন করা হয়েছে।
* জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমকে সাজানো হয়েছে।
* বিষয়বস্তুর বোঝা অনেকাংশেই লাঘব করা হয়েছে।
* পরিবেশ পরিচিতি-সমাজ বইটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে বাংলাদেশ পরিচিতি।
* পরিবেশ পরিচিতি-বিজ্ঞান বইটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে প্রাথমিক বিজ্ঞান।
* যুগের চাহিদা ও একুশ শতকের বাস্তবতা ধারন করে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে।
* জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর নির্দেশনা অনুসারে প্রাথমিক স্তরের ধর্ম শিক্ষা (ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্ট) শিক্ষাক্রমে নৈতিক শিক্ষা সংযোজন করা হয়েছে।








 জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড  প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ২০১২

বিস্তৃত শিক্ষাক্রম-১ (CURRICULUM OF PRIMARY EDUCATION BANGLADESH)


(CURRICULUM OF PRIMARY EDUCATION BANGLADESH)
প্রাথমিক শিক্ষার পরিমার্জিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:-

 প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য:
শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগিক বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্ববোধে, বিজ্ঞানমনস্কতায়, সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করা।

প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য:
১.আল্লাহ তা’য়ালা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস ও শিশুর মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা এবং সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
২. শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির মাধ্যমে শিশুর কল্পনা-শক্তি, সৃজনশীলতা ও   নান্দনিকবোধের উন্মেষে সহায়তা করা।
৩.বিজ্ঞানের নীতি-পদ্ধতি ও প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন, সমস্যা সমাধানে তার ব্যবহার এবং বিজ্ঞানমনস্ক ও অনুসন্ধিৎসু করে গড়ে তুলতে সহায়তা করা।
৪. ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতার বিকাশ এবং নিজেকে প্রকাশ করতে সহায়তা করা।
৫.  গাণিতিক ধারণা, যৌক্তিক চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করা।
৬. সামাজিক ও সুনাগরিক হওয়ার গুণাবলি এবং বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে সহায়তা করা।
৭.  ভালো-মন্দের পার্থক্য অনুধাবনের মাধ্যমে সঠিক পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করা।
৮.   অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, পরমতসহিষ্ণুতা, ত্যাগের মনোভাব ও মিলেমিশে বাস করার মানসিকতা সৃষ্টি করা।
৯.প্রতিকূলতা মোকাবেলার মাধ্যমে শিশুর আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করা।
১০. নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে শ্রমের মর্যাদা উপলব্ধি ও আত্মমর্যাদা বিকাশে সহায়তা করা।
১১. প্রকৃতি, পরিবেশ ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জানতে ও ভালবাসতে সহায়তা করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করা।
১২.নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে সচেষ্ট করা।
১৩. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ব্দ্ধু করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভালোবাসতে সাহায্য করা।

প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতা
১.  সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’য়ালা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন, সকল সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসায় উদ্দীপ্ত হওয়া।
২.  নিজ নিজ ধর্ম প্রবর্তকের আদর্শ এবং ধর্মীয় অনুশাসন অনুশীলনের মাধ্যমে নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করা।
৩.  সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্দীপ্ত ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
৪. কল্পনা, কৌতূহল, সৃজনশীলতা ও বুদ্ধির বিকাশে আগ্রহী হওয়া।
৫. সংগীত, চারু ও কারুকলা ইত্যাদির মাধ্যমে সৃজনশীলতা, সৌন্দর্যচেতনা, সুকুমারবৃত্তি ও নান্দনিকবোধের প্রকাশ এবং সৃজনশীলতার আনন্দ ও সৌন্দর্য উপভোগে সামর্থ্য অর্জন করা।
৬. প্রকৃতির নিয়মগুলো জানার মাধ্যমে বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করা।
৭.বিজ্ঞানের নীতি ও পদ্ধতি এবং যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের অভ্যাস গঠন এবং বিজ্ঞানমনস্কতা অর্জন করা।
৮.  প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা ও প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।
৯. বাংলা ভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা কাযর্ক  রভাবে ব্যবহার করা।
১০. বিদেশি ভাষা হিসেবে  ইংরেজি ভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন ও ব্যবহার করা।
১১. গাণিতিক ধারণা ও দক্ষতা অর্জন করা।
১২. যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে   পারা।
১৩. মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বসংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
১৪. স্বাধীন ও মুক্তচিন্তায় উৎসাহিত হওয়া এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুশীলন করা।
১৫. নৈতিক ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপণ এবং তা বান্তব জীবনে প্রয়োগ করা।
১৬.ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সংরক্ষণে যত্নশীল হওয়া।
১৭.  বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুসহ নারী-পুরুষ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের মানসিকতা অর্জন করা।
১৮.  অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে ত্যাগের মনোভাব অর্জন ও  পরমতসহিষ্ণুতা প্রদর্শন এবং মানবিক
গুণাবলি অর্জন করা।
১৯. সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং নিজের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
২০.  প্রতিকূলতা ও দুর্যোগ সম্পর্কে জানা এবং তা মোকাবেলায় দক্ষ ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া।
২১.  নিজের কাজ নিজে করা এবং শ্রমের মর্যাদা দেওয়া।
২২.  প্রকৃতি, পরিবেশ ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জানা ও ভালোবাসা এবং পরিবেশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ হওয়া।
২৩. আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবেলায় ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণে সচেষ্ট হওয়া।
২৪. মানুষের মৌলিক চাহিদা ও পরিবেশের ওপর জনসংখ্যার প্রভাব এবং জনসম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা।
২৫.  শরীরচর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন এবং নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করা।
২৬. নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের অভ্যাস গঠন করা।
২৭. মুক্তিযুদ্ধের  চেতনায়  দেশপ্রেম    জাতীয়তাবোধে  উদ্দীপ্ত  হওয়া  এবং  ত্যাগের  মনোভাব গঠন    দেশ গড়ার কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।
২৮. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা এবং এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ।
২৯.  বাংলাদেশকে জানা ও ভালোবাসা।
(চলবে...)